অনলাইন ডেস্ক ।। বিশ্ব আজ করোনা মহামারীতে আক্রান্ত। এরই মাঝে মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-আজহা সমাগত। যে উৎসবের প্রধান আয়োজন পশু কোরবানি। এই পশু কোরবানিকে সামনে রেখে বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে থাকে বিশেষ প্রস্তুতি। তবে এবার এক অজানা আতঙ্কে সবাই ঘরমুখো। অকারণে কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। তাই সবাই ঝুঁকছে ভার্চুয়াল জগতে। বর্তমানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য থেকে শুরু করে সবকিছুই পাওয়া যায় বাসায় বসে। কোভিট ১৯ সংক্রমণ আতঙ্কে এবার অধিকাংশ মানুষ পশু ক্রয়ে অনলাইন শপে আগ্রহ প্রকাশ করছে। দিলু রোডে বসবাসরত মাহাবুব আলম বললেন, অনেক বছর যাবত দুই ছেলেকে নিয়ে কোরবানির হাটে যাই। কিন্তু এবার আর যাওয়া হবে না। ছেলেরা আগ্রহ প্রকাশ করছে না। তাই ভাবছি অনলাইন শপ থেকেই এবারের কোরবানির গরু ক্রয় করবো। তবে দাম নিয়ে চিন্তায় আছি, ন্যায্যমূল্যে কিনতে পারব কিনা।
অনলাইন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কোরবানির পশুর ক্রেতা ও বিক্রেতারা একসঙ্গে মিলিত হতে পারে। বিক্রেতা গরু, ছাগল বা কোরবানির উপযুক্ত পশুর স্থিরচিত্র বা ভিডিও দেখান। গরুর দাম, বয়স, ওজন, কয়টা দাঁত রয়েছে, কোথা থেকে আনা হয়েছে, এমন সব তথ্য থাকে। কোরবানির হাটে গিয়ে ক্রেতা যেভাবে গরু যাচাই-বাছাই করে থাকেন, ঠিক সেভাবেই দেখা যাবে। পছন্দ হলে ক্রেতা গরু কিনবেন। ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডে বা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (বিকাশ, রকেট, নগদ) মাধ্যমে দাম পরিশোধ করা যাবে। ক্রেতা যেখানে চাইবেন, সেখানেই গরু পাঠিয়ে দেয়া হবে। জনপ্রিয় অনলাইন মার্কেটপ্লেস বিক্রয় ডটকম, এখনি ডটকম, দেশী গরু বিডি ডটকম, দারাজ বাংলাদেশ, ই গরুর হাট এবং বেঙ্গল মিটসহ অনেক প্রতিষ্ঠান এই বাজার নিয়ে বসেছে। এছাড়াও ১১ জুলাই ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে কোরবানির পশু বিক্রির অনলাইন প্লাটফর্ম ‘ডিজিটাল হাট’ উদ্বোধন করা হয়। করোনা মোকাবেলায় ডিএনসিসি, আইসিটি ডিভিশন, ই-কমার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম এ্যাসোসিয়েশন যৌথভাবে এই ডিজিটাল হাট বাস্তবায়ন করছে। ক্রেতারা চাইলে ডিজিটাল হাট থেকে ন্যায্যমূল্যে ক্রয়কৃত পশু ঢাকার পাঁচটি এলাকা থেকে মাংস প্রক্রিয়াকরণ করে নিজ নিজ ঠিকানায় ডেলিভারি নিতে পারবে। ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, গত কয়েকদিনে কয়েকটি টিমের নিরবচ্ছিন্ন পরিশ্রমের ফসল আজকের এ ডিজিটাল হাট। ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত গরুর হাটগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শহরের পাশঘেঁষে কয়েকটা মাত্র হাটে গরু বিক্রি হবে এবার।
যারা হাটের ভিড় পছন্দ করেন না, তাদের জন্য অনলাইনে পশু ক্রয়ে রয়েছে নানা সুযোগ-সুবিধা। এছাড়াও অনেকেই নিজের খামারের নামে ফেসবুকে পেজ খুলে সেখানে পশুর ছবি, ভিডিও, বিবরণ ও দামসহ প্রয়োজনীয় সব তথ্যই তুলে ধরেছেন। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গ্রামীণ অর্থনীতির সঙ্গে কোরবানির পশুর হাটের একটা যোগ আছে। বাংলাদেশের চামড়া শিল্পও অনেকটা নির্ভরশীল কোরবানির ওপরে। তাই দুই দিক রক্ষা করতে এবার কোরবানির পশুর হাটের জন্য অনলাইন হাট এবং ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেয়া উচিত।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. আবদুল জব্বার শিকদার সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, যেহেতু এবার পরিস্থিতিটা অস্বাভাবিক, সে কারণে অনলাইনে বিক্রির সংখ্যা অন্য বছরের তুলনায় বাড়বে। কারণ এই পরিস্থিতিতে ভিড় ঠেলে অনেকে বাজারে যেতে চাইবেন না। এছাড়া এখন অনলাইনে গরুর ছবি দেখা যায়, ওজন জানা যায়, এমনকি পশুর মাংস কত কেজি হবে সেটাও জানা সম্ভব। ই-কমার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেছেন, ই-ক্যাবের সদস্যভুক্ত একশরও বেশি অনালাইন প্লাটফর্ম কোরবানির পশু বিক্রি করছে। এবার ঢাকার দুই সিটি মিলিয়ে পশুর হাট বসবে মোট ২৪টি। এরমধ্যে উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ১০টি এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় হবে ১৪টি। সারা দেশের জেলা উপজেলায়ও পশুর অস্থায়ী হাট বসানোর অনুমতি দেয়া হয়েছে। বাস্তবে অনুমোদনের বাইরেও কোরবানিতে আরো অনেক হাট বসে। সব মিলিয়ে এই হাটের সংখ্যা সারাদেশে পাঁচ হাজারের কম হবে না।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, দেশে মোট পশুর সংখ্যা দুই কোটি ৪০ লাখ। সবমিলিয়ে কোরবানির জন্য এক কোটি ২০ লাখের বেশি পশু প্রস্তুত রয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্র থেকে জানা যায়, গত বছর দেশে কোরবানিযোগ্য প্রায় এক কোটি ১৮ লাখ পশু প্রস্তুত ছিল। আর গত বছর জবাই করা হয়েছিল এক কোটি ছয় লাখ পশু। ১২ লাখ অবিক্রীত ছিল। যা এবার আবার বাজারে উঠবে। বর্তমানে দেশে অসংখ্য গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া এমনকি কিছু উট ও দুম্বার খামারও গড়ে উঠেছে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডাঃ আবদুল জব্বার শিকদার বলেছেন, এ বছরও আমাদের দেশে যে পশু আছে তা কোরবানির জন্য যথেষ্ট। দেশের বাইরে থেকে গরু আনার কোন প্রয়োজন নেই।
0 Comments