এস এম রাজা।। সম্প্রতি ঈশ্বরদীর পাকশীতে গভীর রাতে সংঘটিত পুলিশের এএসআই সুজাউল ইসলাম হত্যা মামলার প্রধান আসামি কোয়েল (৩০)আবারো পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে। গত ২১ জুলাই'২০ রাতে পাকশী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সট্রাক্টর শহিদুল ইসলাম শহিদ সঙ্গীয় ফোর্সসহ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পাকশী থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেফতারকৃত কোয়েল পাকশী মেরিন পাড়ার মৃত শাহজাহান সিরাজীর ছেলে।
ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ ফিরোজ কবির জানান,গত ২০১৫ সালের ৪ অক্টোবর গভীররাতে পাকশী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এটিএসআই সুজাউল ইসলাম কে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। মাদক ব্যবসার বড় বাধা হিসেবে গ্রেফতারকৃত কোয়েল তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে এবং তা বাস্তবায়নের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করে। ঘটনার রাতে বিপুল পরিমাণ মাদকের চালান ধরিয়ে দেয়ার কথা বলে সুজাউল কে মোবাইল ফোনে পাকশী রেলওয়ে কলেজ এর কাছে ডেকে নেয় কোয়েল। সুজাউল সরল বিশ্বাসে বাসা থেকে মোটরসাইকেলযোগে সেখানে উপস্থিত হয়। সেখানে পেপার মিল রোডের উপরে আগে থেকে অপেক্ষারত কোয়েলের সাথে দেখা হয়ে যায় এবং কথা বলতে থাকে। এ সময় রাস্তার পাশে লুকিয়ে থাকা কোয়েলের সঙ্গি মাদক সিন্ডিকেটের সদস্য রুবেল পেছন থেকে এসে গাছের ডাল দিয়ে সুজাউলের মাথার পেছনে সজোরে আঘাত করে। এতে সুজাউল জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এরপর কোয়েল এর অপর সঙ্গী রাসেল সেতু তহিদুল মাসুম জীবন মিলে সুজাউল কে কলেজের পেছনে হলুদের খেতে নিয়ে গিয়ে দড়ি দিয়ে হাত পা বেঁধে লাঠি দিয়ে অমানুষিকভাবে মারধর করে। এক পর্যায়ে রুবেল চাকু দিয়ে সুজাউলের পিঠে একাধিক আঘাত করে। এতে প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হয়। এসময় রক্তভেজা গেঞ্জি সুজাউলের মুখে গুঁজে দিয়ে হ্যাচকা বেলেট দিয়ে গলা কেটে হত্যার মাধ্যমে মৃত্যু নিশ্চিত করে হত্যাকারীরা পালিয়ে যায়। এদিকে মধ্যরাতে বাসা থেকে বেরিয়ে আসা সুজাউল সকাল পর্যন্ত বাসায় না ফেরায় তার স্ত্রী সহ পরিবারের সদস্যরা ভয়াবহ উৎকণ্ঠার মধ্যে পড়ে যায় এবং বিষয়টি ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ বিমান কুমার দাস কে জানায়। এ সংবাদ পাওয়ার পর তিনি তড়িত্গতিতে সুজাউল কে খোঁজাখুঁজি করার জন্য বিভিন্ন দিকে পুলিশসহ সোর্স লাগিয়ে দেন।একপর্যায়ে উল্লেখিত স্থান থেকে সুজাউলের বিভৎস লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এব্যাপারে ঈশ্বরদী থানায় সুজাউলের স্ত্রী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। যার নম্বর ৫ তারিখ ৫/১০/১৫ ইং। ধারা ৩০২/৩৭৯/৩৪ দন্ডবিধি। এই মামলার তদন্তকারী অফিসারের দায়িত্ব প্রাপ্ত হন ঈশ্বরদী থানার তৎকালীন সেকেন্ড অফিসার এসআই ইসলাম হোসেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত হবার পর এসআই ইসলাম হোসেন রাতদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে মাসাধিককাল এর মধ্যেই আসামি পাকশী বাজার পাড়ার আব্দুর রহিমের ছেলে রাসেল (২০) কে গ্রেফতারের মাধ্যমে এ মামলার রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হন। আসামি রাসেলের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দেয়া জবানবন্দি অনুযায়ী এ মামলার অপর আসামি পাকশী বাবুপাড়ার শহিদুলের ছেলে সেতু (২৫)ও তার ভাই জীবন (২২) পাকশী দিয়াড় বাঘইলের মৃত ছাদেক আলীর ছেলে তৌহিদুল (৩৫) পাকশী বাজার পাড়ার রহিমের ছেলে মাসুম (২৩) কে তথ্যপ্রযুক্তি সিডিআর বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিশেষ অভিযান চালিয়ে গাজীপুরের বোর্ড বাজার থেকে তাদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। অপরদিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পৃথক পৃথক অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তারের সময় পাকশীর দিয়াড় বাঘইল গ্রামের মৃত ইদ্রিস এর ছেলে রুবেল (২৫) বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় এবং এই মামলার মূল পরিকল্পনাকারী কোয়েল গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার হয়। অপর আসামি পাকশী বাজারপাড়া তৎকালীন বাসিন্দা ও স্থানীয় স্থায়ী ঠিকানা রূপপুর বাজারের মনিরুল ইসলামের ছেলে ইব্রা পলাতক রয়েছে। মামলার তদন্তকারী অফিসার ইসলাম হোসেন ২০১৬ সালের ৩১ জুলাই পাবনা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলার চার্জশিট প্রদান করেন । মামলাটি বর্তমানে বিজ্ঞ পাবনা জেলা দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এই মামলার প্রধান আসামি কোয়েল শারীরিকভাবে অসুস্থতার দোহাই দিয়ে আদালত থেকে জামিন লাভ করার পর নির্ধারিত তারিখে আর হাজির না হয়ে পলাতক জীবন যাপন করতে থাকে। এ কারণে বিজ্ঞ আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। এরই প্রেক্ষিতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ২১ জুলাই রাতে তাকে পাকশী থেকে পুনরায় গ্রেপ্তার করা হয়। এ বিষয়টি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচার হলে সুজাউল হত্যাকান্ডের বর্বরোচিত দৃশ্যপট ঈশ্বরদী বাসীর স্মৃতিতে ভেসে ওঠে। সুজাউলের নিজের পরিবার সহ সর্বস্তরের মানুষ এখন মামলার বিচারের রায় দেখার অপেক্ষায় রয়েছে।
0 Comments