এস এম রাজা।। সমাজে এমন কিছু মানুষ আছে যাদের অভাবে স্বভাব নষ্ট হয়ে গেছে।আর এ কারণেই লাজ-লজ্জার মাথা খেয়ে বেছে নিয়েছে ভিক্ষাবৃত্তি,চুরি,ছিনতাই অথবা প্রতারণার মত ঘৃণ্য কোন পথ। আবার এমন কিছু মানুষ আছে যাদের স্বভাবের কারণেই ভয়াবহ অভাব নেমে এসেছে তাদের সংসারে। জীবন হয়ে গেছে অন্ধকারাচ্ছন্ন ও বিষাদময়। দুটো ধারায়ই একই উদ্দেশ্যে প্রবাহিত। আর সেটা হলো অর্থ উপার্জন। যদিও এটা তাদের একান্তই নিজস্ব ব্যাপার তারপরও কথা এসে যায় সমাজ, সংসার এবং দেশের কথা ভেবে। কারণ উপরে উল্লেখিত দুটো বিষয়ই সুখকর সংবাদ নয়। ভিক্ষাবৃত্তি ধর্ম সমাজ কিংবা রাষ্ট্র কখনও স্বীকৃতি দেয়না। এটা সব সময় নিন্দনীয় হিসেবেই সাধারণত গণ্য হয়। তারপরও বিশেষ পরিস্থিতির শিকার হয়ে কেবল সংসারের দায় বদ্ধতা থেকে এপথ পেশা হিসেবে বেছে নেয়াটা খুব একটা মন্দ চোখে না দেখার মানবিকবোধও সমাজের নেই একথা বলবো না। আর এটাই হওয়া উচিত। সঠিক জায়গায় সঠিক বিচার করে রায় ঘোষণা করাটাই হলো সুবিচার। এই সমাজে এমন অনেক মানুষ আছে যারা স্বভাবের কারণে পুকুর চুরি করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে বটে কিন্তু সংসার হয়েছে নরক। আর স্ত্রী-সন্তান হয়েছে সেই নরকের বাসিন্দা। সাথে নিজেও। অথচ, স্বভাব নয় শারীরিক কারণে নিতান্তই বাধ্য হয়ে আপন সংসারকে স্বর্গে রূপান্তর করার নিরলস প্রচেষ্টা এ এক অন্যরকম অনুভূতি।যা স্বচক্ষে না দেখলে অনুভব কিংবা উপলব্ধি করা একটু কষ্টসাধ্য। চলার পথে এমন কিছু বিষয় দৃষ্টিগোচর হয় যা দেখে এবং শুনে সত্যি বিস্মিত হতে হয়। অভিভূত হয়ে যায়। তেমনি একটি বিষয় চমকিত করেছে আজ ৩০ জুলাই বৃহস্পতিবার দুপুরে ঈশ্বরদী বাজারের প্রধান সড়কে। যখন শতশত মানুষ ঈদকে সামনে রেখে কেনাকাটার প্রয়োজনে করোনা সংক্রমণের বিষয়টি উপেক্ষা করে বাজারে আসা যাওয়ার প্রতিযোগীতায় ব্যস্ত। ঠিক তখনই দৃষ্টিগোচর হলো অপ্রত্যাশিত একটি দৃশ্য। ভরদুপুরে প্রখর রোদে যদিও এমন কিছু দৃষ্টিগোচর হওয়া মোটেই সুখকর নয় তবুও মেনে নেয়া ছাড়া কোন উপায় থাকেনা। আমার মত অধম মূর্খ পাপির মনে যতই ব্যাথার উদ্রেক হোক না কেন কিই বা সাধ্য আছে আমার করার। তবুও কাছে গিয়ে একটু সহানুভূতি জ্ঞাপন আর ভেতরের কিছু তথ্য জানার চেষ্টা। সত্যি অবাক হয়ে গেছি আমি তার কথা শুনে। বাড়ীতে স্ত্রী আছে। দুটি সন্তান আছে। বড়টা মেয়ে,ছোটটা ছেলে। লালপুর কলেজে ডিগ্রীতে পড়ে মেয়েটা , আর ছেলেটা নবম শ্রেণীতে। শতভাগ গৃহিনী তার স্ত্রীই পরিচর্যা করে দুটি সন্তানকে। আর শারীরিক প্রতিবন্ধি বাবু এভাবেই দিনভর মানুষের পায়ের তলায় রাস্তায় গড়িয়ে উপার্জন করে জীবন-জীবিকা আর সন্তানদের পড়া লেখার খরচ। নাটোরের লালপুর উপজেলার বুধাপাড়া গ্রামের মোশারফের ছেলে বাবুর এভাবেই এগিয়ে চলেছে সংগ্রামী জীবন। চাওয়া পাওয়া তেমন কিছুই নেই। সন্তান দুটিকে পড়ালেখা শিখিয়ে মানুষের মত মানুষ করায় তার একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। অসীম মনোবলের অধিকারী বাবুর বিশ্বাস তার ছেলে মেয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হবে। মানুষের মত মানুষ হবে। সফল হবে তার জীবন সংগ্রাম। সংসার হবে অনাবিল সুখের এক অকল্পনীয় স্বর্গ। তার এ সংগ্রামে কেউ পাশে দাঁড়াইনি বলে কোন অভিযোগ নেই তার। বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে স্বাগত জানাবে সে। পরম করুনাময় স্রষ্টায় তার একমাত্র ভরসা। হ্যাঁ, পরম করুনাময় স্রষ্টার ভরসা সবার তবুও বলি আসুন আমরা কেউ না কেউ বাবুর স্বপ্ন পূরণে অছিলা হই।
0 Comments